ভালোবাসা দিবসে চাপা পড়ল ছাত্র আন্দোলনে হত্যার সেই ঘটনা

১৯৮২ সাল। তখন ক্ষমতায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এসময় শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সে বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো। শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি, গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি ও গণমুখী, বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির দাবিতে ছাত্র জমায়েত ডাকে। এসময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী একটি মিছিল করে। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।
মিছিলটি হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। একপর্যায়ে মিছিলে রায়ট কার ঢুকিয়ে রঙ্গিন গরম পানি ছিটাতে থাকে পুলিশ। এরপর বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ ও গুলি শুরু করে তারা। এতে গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। গুলিবিদ্ধ জয়নালকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিহত ও আহতদের অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সে দিন জয়নাল ছাড়া জাফর, মোজাম্মেল, আইয়ুব ও দীপালি সাহাসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন। নিখোঁজ হন আরো অনেকে। সরকারি হিসাবে গ্রেফতার করা হয় ১ হাজার ৩৩১ জন ছাত্রকে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি ছিল। পরে এদের মধ্যে অনেকেরই আর খোঁজ মেলেনি।
এদিকে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। সেখানে মেডিক্যাল ও অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। এতে নিহত হন কাঞ্চন। ভয়ঙ্কর এই ঘটনার আগে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস কখনো পালন হয়নি।
ভালোবাসা দিবসে চাপা পড়ল ছাত্র আন্দোলনে হত্যার সেই ঘটনা
সাবেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন বলেন, জয়নাল ছাড়া পরে মোজাম্মেল আইয়ুব নামের আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর এটাই ছিল ইতিহাসে লিখে রাখার মতো ছাত্রবিক্ষোভের এবং নিপীড়নের সবচেয়ে বড় ঘটনা। অথচ এরশাদ সরকার এই ভয়ঙ্কর দিনটিকে ভুলিয়ে দিতে পরের বছর থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে হাজির হলেন। পরের প্রজন্মকে জানতেই দেওয়া হলো না নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।