মতামত

আসলেই কি শবে বরাত বলতে কিছু আছে?

শবে বরাতের নিয়ে সমাজে কিছুটা মতভেদ রয়েছে আলেমদের মাঝে। কেউ কেউ বলে থাকে সহীহ হাদিস দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত না। তারা অন্য রাতের মতই মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। তাহলে আমরা কোনটা মানবো?

শবে বরাত তথা পনের শাবানের রাত সর্ম্পকে একটি হাদিস সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণসহ উল্লেখ করা হল।

হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘আল্লাহ তাআল অর্ধ-শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকেন।
উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার ‘কিতাবুস সহীহ’ এ যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই প্রসিদ্ধ (১৩/৪৮২এ), তিনি এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৪ নম্বর হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকী(রহঃ) ‘শুআবুল ঈমান’ এ(৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩) ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাতে এ বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আরও বহু হাদিসের ইমামগণ তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

এমনকি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী(রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন, ‘এসব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহ সহী প্রমাণিত হয়’।

এরপর শায়খ আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খণ্ডন করেন, যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদিস নেই।

শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখা সর্ম্পকে একটি হাদিস রয়েছে- হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পনের শাবানের রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে এবং দিনের বেলা রোজা রাখবে। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি? কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজা, হাদিস নম্বর-১৩৮৪)

সুবহান আল্লাহ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button