অর্থনীতি

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের অবৈধ পর্ষদের বিষয়ে নির্বিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করে বহাল তবিয়তে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। শুধু তাই নয় দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া সাবেক এমডির নানা ধরনের বিধিবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি অববমাননা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অবৈধ পর্ষদ বিলুপ্ত করার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এ কারণে ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের অবৈধ পর্ষদের বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক সুইজারল্যান্ড নিবন্ধিত মালয়েশিয়ান কোম্পানি আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল হোল্ডিং এজি।

২০০৮ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করার মাধ্যমে মালয়েশিয়ান কোম্পানিটি ব্যাংকটির পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। বিগত ১৬ বছর ধরে ব্যাংকটি পরিচালনা করলেও সঠিক কর্ম পরিকল্পনা ও মূলধন সহায়তা না করায় ব্যাংকটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বল হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১১ বছর ব্যাংকটিকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালয়েশিয়ান নাগরিক জনাব শফিক বিন আব্দুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বিশেষ অডিটে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার ও অব্যবস্থাপনার গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি অবৈধভাবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অফিস করতে থাকেন। একপর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার এই অবৈধ অবস্থান ও বিভিন্ন অনিয়মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় ব্যাংক স্টাফদের আন্দোলনের মুখে ব্যাংকের তৎকালীন এইচ আর হেড পারভেজ ইউসুফ চৌধুরী, কোম্পানি সচিব রবিউল আলম উজ্জ্বল ও অ্যাকাউন্টস বিভাগের প্রধান সাখাওয়াত হোসেনও ইস্তফা দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন।

জানা যায় ব্যাংকটি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংকের স্বাধীন পরিচালক হিসেবে আকলিফ বিন আমিরকে অনুমোদন দেয় নাই। তথাপি তিনি অবৈধভাবে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ব্যাংকের এমডি ও কোম্পানি সচিব বারং বার বিএসইসিকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিএসইসির নীতিমালার আওতায় আকলিফ বিন আমিরের যোগ্যতা না থাকায় তাকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে অনুমোদন না দেয়ার বিষয়টি গত নভেম্বর ২৩ চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেয়। তথাপি বাংলাদেশের রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুনকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা ও বৃদ্ধআঙ্গুলি প্রদর্শন করে ব্যাংকের বিদায়ী এমডি শফিক বিন আব্দুল্লাহ ও কোম্পানি সচিব চেয়ারম্যানের পদে আকলিক বিন আমিরকে বহাল রাখতে সাহায্য করেন। এমনকি বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিষয়টি সকল পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গোপন করে ২০২৪ সালের এজিএম পরিচালনা করেন।

জানা যায় সাবেক এমডি শফিক বিন আব্দুল্লাহ তার অবৈধ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থেই এই অবৈধ পরিচালনা পর্ষদকে বহাল রাখতে সহায়তা করেছেন এবং নিজেকে এমডি হিসাবে অপরিহার্য করে পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে শফিকের পুনঃনিয়োগ প্রত্যাখান করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আত্মসাৎকৃত ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলেও পর্ষদ চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং শফিকের পক্ষে অবস্থান নেন। বাংলাদেশের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে এভাবেই মালয়েশিয়ান পর্ষদ অবজ্ঞা করে নিজের খেয়াল খুশি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতি এহন অবমাননা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অবৈধ পর্ষদ বিলুপ্ত করার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এ কারণে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯ ডিসেম্বর একজন নির্বাহী পরিচালককে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে অস্থায়ী নিয়োগ দিলে গত প্রায় এক মাসেই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আমানতকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। এরই মধ্যে ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও উন্নতি হতে দেখা যায়। সম্প্রতি মালয়েশিয়ান অবৈধ পর্ষদ নতুনভাবে ব্যাংকটিতে নিজেদের কর্তৃত্ব পুনঃ উদ্ধারে সাবেক এমডি শফিক বিন আব্দুল্লাহ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই নির্দেশনায় সাবেক কোম্পানি সচিব উজ্জ্বল ও এইচ আর হেড পারভেজ ইউসুফ চৌধুরী ব্যাংকে পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দুর্নীতিতে পাকা হাত সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালককে ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা যায়। এই নির্বাহী পরিচালক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদে চাকরি করে অবসরে যান।

এই দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে মালয়েশিয়ান পর্ষদের হুমুক মোতাবেকই কার্য পরিচালনা করবেন। ফলে বাংলাদেশের আমানতকারী ও ব্যাংকের বাংলাদেশী কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষা না করে নিজেদের আয়ের উৎস জোরদার করবে। জানা যায় ব্যাংকের অবস্থা উন্নতির পরিবর্তে চূড়ান্ত ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির নীরব ভূমিকা সবার মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button