অপকর্মকারীদের ঠাঁই বিএনপিতে নেই— তারেক রহমান

নেতাকর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর দেখেছি সামগ্রিকভাবে দেশ পিছিয়েছে। একটা কথা বলতে চাই দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হলে, দুইটা বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। একটা রাজনৈতিক অধিকার, আরেকটা সব শ্রেনির মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার। এটা বাস্তবায়নে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কাজ করছে। আর জনগণের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এজন্য সকলকে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে পরিণতি কী হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে, অনেক কিছু বোঝার আছে। জনগণ থেকে, জনগণের প্রত্যাশা থেকে দূরে চলে গেলে ৫ আগস্টের পরিণতি হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে কোনো রাজনৈতিক দলকে বাইরে থাকতে হলে তাদের জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জনগণ যদি আপনার পাশে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা? কিসের রাজনৈতিক কর্মী? একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনার সার্থকতা কী? দশটা মানুষ আপনাকে সালাম দেয় কেন? তাঁদের জন্য আপনি কাজ করেন, বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি এমন কিছু করেন, যেটা তাঁর মনে কষ্ট দেয়, তখন তিনি আপনার পেছনে থাকবেন না। এখন মানুষ অনেক সচেতন। মানুষ আমাদের ওপরে আস্থা রাখতে চাইছেন, অর্থাৎ বিএনপির ওপরে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ এমন কোনো কাজ করেন, যাতে আস্থা নষ্ট হবে, তাহলে আমার পক্ষে আমাদের পক্ষে তাঁকে টানা সম্ভব নয়। টানব না আমি তাঁকে। তাঁকে শেল্টার দেব না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতে হবে। কোনো নেতা-কর্মী মানুষের আস্থা নষ্ট করলে তাঁকে আমরা নিজের ভাবতে পারব না। বহু ঝড়ঝঞ্ঝা, অত্যাচার–নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। কাজেই আমাদের নিজের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ বেশি দেখতে হবে। আমরা যখন খারাপ কিছু জানছি, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সমাজে যে খারাপ, যে অন্যায় করে, তার সঙ্গে আমরা সম্পর্ক রাখতে চাই না।’
মানুষ বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চায়, বিএনপির কাছে মানুষের অনেক প্রশ্ন আছে—এমন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘সামনে নির্বাচন হলে বিএনপির সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা সরকার গঠন করার। সরকার গঠন করলে বিএনপি মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করতে পারবে বলে মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস আছে। অনেকে অনেক কথা বলবেন, অনেকের অনেক রকম থিওরি আছে, অনেক রকম বক্তব্য আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা সেটা আশাও করি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনোভাব তুলে ধরবেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কথা বলবেন। এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। কিন্তু দিন শেষে একজন বেকার জানতে চাইবেন, তাঁর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচানোর জন্য আপনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন বা করতে চান। একজন মা–বাবা দিন শেষে জানতে চান, তাঁর সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে আপনি, বিএনপি দল হিসেবে কী পদক্ষেপ নেবে। পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইবেন, বিএনপি যদি দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়, তারা চিকিৎসাসেবার জন্য কী পদক্ষেপ নেবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে কার সঙ্গে যাব, কাকে গ্রহণ করব, কাকে গ্রহণ করব না, কার সঙ্গে সম্পর্ক করব, কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব না, এসব মানুষ দেখবেন; তবে মানুষ তাঁর দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, নুন এসব জিনিসের দাম বাড়ছে। মানুষের আয় বাড়ানো বা দাম সহনশীল করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এগুলো মানুষ জানতে চান, দেখতে চান।’
তিনি আরও বলেন, মানুষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর আস্থা রাখতে চাচ্ছে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য কেউ যদি কাজ করে, তাকে দলে রাখা সম্ভব হবে না। সমাজে ভালো খারাপ দুই ধরনের মানুষ আছে। যে খারাপ মানুষ তার সঙ্গে আমরা সম্পর্ক রাখতে চাই না। ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, এটা সকল দলের দফা। এসময় ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।