জাতীয়

১৫ই জানুয়ারির মধ্যে বিপ্লবের ঘোষণাপত্র চায় বৈষম্যবিরোধীরা

আগামী ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি থেকে এ আলটিমেটাম দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
মূলত জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্যই ৩১শে ডিসেম্বরের কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তারা। কিন্তু, নানা নাটকীয়তার পর সোমবার মধ্যরাতে কর্মসূচির নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা নেতাকর্মীরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হতে শুরু করেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যেমন ব্যাপক জমায়েতের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়েছিল বাস্তবতা ছিল তারচেয়ে ভিন্ন।
আগেরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ দেড় থেকে আড়াই লাখ জমায়েতের কথা বলেছিলেন। তবে নির্ধারিত সময় বিকেল তিনটা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের বাইরের দিকটা ফাঁকা ছিল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তাদের ব্যানার ফেস্টুনে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ বা ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ সমর্থনে স্লোগান লেখা ছিল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একই সময়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন চলছিল। সেই সম্মেলন শেষ হওয়ার পর শহীদ মিনার এলাকা জনসমাগমে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
‘মুজিববাদী’ সংবিধান বাতিল চান অনেকে
মার্চ ফর ইউনিটিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আহত এবং নিহতদের স্বজনদের অনেকে অংশ নেন।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।
সাভার থেকে আসা শায়লা হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রত্যাশিত বিপ্লবের ঘোষণাপত্র না আসায় তারা কিছুটা হতাশ হয়েছেন।
“ওই সংবিধান দিয়েই তো আমাদের নির্যাতন করেছে। ওইটা বাতিল হওয়া উচিত,” বলছিলেন মিজ হাসান।
ঢাকার বারিধারা থেকে আসা কওমী মাদরাসার এক শিক্ষার্থী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মুজিববাদী’ আইন ও সংবিধান বাতিল করে, বাংলাদেশে ইসলামি আইন ও বিধান চালু হবে এটিই তার প্রত্যাশা।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুজ্জামান সিফাত বলেন, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতি আস্থা রাখছেন।
“তাদের নেতৃত্বেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অর্জন সম্ভব হবে,” যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও বক্তৃতা করেন।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী দাবি করেন, সরকারে প্রোক্লেমেশনে সংস্কারের ইঙ্গিত থাকতে হবে।
‘আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো শত্রু নাই’
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে বিচার বহির্ভূত হত্যকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
“পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শাপলা চত্বরে লাইট নিভিয়ে আলেম-ওলামাকে মেরে ফেলা হয়েছে। সেগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন করেছে তার বিচার করতে হবে,” বলেন মি. আব্দুল্লাহ।
পাঁচই অগাস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে “আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো শত্রু নাই,” বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে মি. আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনাদের বলতে চাই রিয়ালিটি মাইনা নেন। আপনাদের আপা ফিরবে না। খুনি হাসিনার পুনর্বাসন হবে না।”
সচিবালয়ে আগুন লাগার প্রসঙ্গ টেনে বিভিন্ন সময়ে বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে মি. আব্দুল্লাহ বলেন, “আগে আমরা দেখেছি সতীদাহ প্রথা, এখন দেখি নথিদাহ প্রথা।”
১৫ই জানুয়ারির মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারির আলটিমেটাম দিয়ে আগামী ১৫ দিন এই ইস্যু নিয়ে নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে যেতে বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধীদের তরফে এই মুহূর্তে বিচার ও সংস্কারকে প্রাধান্য দেয়ার কথাও বলেন মি. আব্দুল্লাহ।
সোমবার রাতের নাটকীয়তা
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎই ফেসবুকে ৩১শে ডিসেম্বরকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের কিছু স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ে। ‘থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, নাও অর নেভার’।
সবার মাঝে কৌতূহল জাগে ৩১শে ডিসেম্বর আসলে কী হচ্ছে? রাজনীতির মাঠেও আলোচনা তুঙ্গে ওঠে।
রোববার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, আসছে ৩১শে ডিসেম্বর দেশে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে, এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বাংলাদেশে। ওইদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করা হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, তারা বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছেন না।
ধোঁয়াশা তৈরি হয় যখন সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ সরকার নিজেই গ্রহণ করেছে।
এ ঘোষণার পর সোমবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দীর্ঘ বৈঠকের কারণে দফায় দফায় পেছানো হয় প্রেস ব্রিফিংয়ের সময়।
অবশেষে রাত দুইটার আগে আগে সংগঠনটি জানায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করায় শহীদ মিনারে মঙ্গলবার পূর্বঘোষিত ঘোষণাপত্র দেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরিবর্তে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button