চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ডের কুমিরায় বনভূমি দখল করে ‘মাটি-টা’ পর্যটন রিসোর্ট

৪০ শতাংশ ভুমি উদ্ধারে বন বিভাগের মামলা
সীতাকুণ্ডের কুমিরায় বনভূমি দখল করে ‘মাটি-টা’ পর্যটন রিসোর্ট

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন কুমিরা ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে জঙ্গল সোনাইছড়ি রক্ষিত বনের অংশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সুবিশাল পর্যটন কেন্দ্র মাটি-টা। এই পর্যটন কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে নৌবাহিনীর অস্ত্রগার। মাটি-টার মালিক তাসনীম মাহমুদ বন বিভাগ, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না বলে অভিযোগ বন বিভাগের। ৫ আগস্টের পর সাবেক পরিবেশ, বন, ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে থাকা বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ বনভূমি উদ্ধার করা হলেও উদ্ধার করা যায়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ট তাসনীম মাহমুদের দখলে থাকা মাটি-টা পর্যটন কেন্দ্রের বনভূমি।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে কুমিরা ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে জঙ্গল সোনাইছড়ি রক্ষিত বনের অংশ দখল করে ২০১৮ সালে গড়ে তোলা হয় মাটি-টা রিসোর্ট পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন কেন্দ্রটির মালিক ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বারের দীর্ঘদিনের নিয়ন্ত্রক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট মাহবুবুল আলমের জামাতা তাসনীম মাহমুদ।
চট্টগ্রাম বন বিভাগের (উত্তর) সহকারী বন কর্মকর্তা সফিউল করিম মজুমদার জানান, মাটি-টা রিসোর্ট গড়ে তোলার সময় বন বিভাগের অন্তত ৪০ শতাংশ রক্ষিত বনভূমি দখল করে নেন মালিক তাসনিম মাহমুদ। এই বনভূমিতে বন বিভাগ কর্তৃক ২০১১-১২ সালে রোপিত বৃক্ষ ছিলো। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বন কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, বনায়নের অন্তত ২৫টি পরিপক্ক গাছ কেটে বনভূমির একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে মাটি-টা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে তৎকালীন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ চৌধূরী (বর্তমানে অবসরে) স্বশরীরে মাটি-টা কর্তৃক বনভূমি দখলের বিষয়টি পরিদর্শনে গেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব খাাটিয়ে সেখানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকেও প্রবেশ করতে দেয়নি। বনভূমি দখলের বিষয়ে মাটি-টা কর্তৃপক্ষকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে দুই দফা যৌথ সার্ভে করার আহ্বান জানিয়ে নোটিশ দেওয়া হলেও মাটি-টার মালিক তাতে সম্মতি দেন নি এবং উল্টো বন বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলে জানান বন কর্মকর্তারা।
সহকারী বন সংরক্ষক সফিউল করিম মজুমদার জানান, ইতিমধ্যে মাটি-টার দখলে থাকা ৪০ শতাংশ বনভূমি উদ্ধারে মামলা দায়ের করা হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। মাটি-টার মালিক তাসনীম মাহমুদকে অভিযুক্ত করে ইতিমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের একাধিক বন কর্মকর্তা জানান, মাটি-টার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস পায়নি বন বিভাগ। বিশেষ করে মাটি-টার মালিক তাসনীম মাহমুদ নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় মনে করতেন।মাটি-টার পাশে নৌবাহিনীল অস্ত্রগার রয়েছে। মাটি-টার ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনীর আপত্তি থাকলেও তাসনীম শেখ হাসিনা পরিবারের ঘনিষ্ট হওয়ায় তারাও তথন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
বন কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের পর সাবেক পরিবেশ, বন, ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে থাকা বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ বনভূমি উদ্ধার করা হলেও উদ্ধার করা যায়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ট তাসনীম মাহমুদের দখলে থাকা মাটি-টা পর্যটন কেন্দ্রের দখলে থাকা বনভূমি।

এ প্রসঙ্গে মাটি-টার মালিক তাসনীম মাহমুদ রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি বন বিভাগের জায়গা দখল করেননি। বন বিভাগের অভিযোগ মিথ্যা। তিনি ২০ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি কিনে মাটি-টা রিসোর্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তাসনীম মাহমুদ বলেন এ ব্যাপারে তিনি মামলা দায়ের করেছেন বন বিভাগের বিরুদ্ধে। মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটানোর কথা অস্বীকার করেন তাসনীম মাহমুদ।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা গেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ট তাসনীম মাহমুদের মাটি-টার দখলে থাকা বনভূমি কেন উদ্ধার করা যাচ্ছে-না এমন প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নুল আবেদীন জানান, আমরা এব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করেছি। শীঘ্রই মাটি-টার দখলে থাকা বনভূমি চিহ্নিত করে উচ্ছেদ পূর্বক উদ্ধার করা হবে।
প্রসঙ্গত বন পাহাড় ঘিরে কুমিরা ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নে মাটি-টা রিসোর্টে দিনের বেলা প্রবেশের জন্য ব্যয় করতে হয় জনপ্রতি ৩০০০ টাকা। রাতে যুগল অবস্থানের জন্য ব্যয় করতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এই রিসোর্টে সরকারী নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করেই বন পাহাড়ে রাত-দিন চলে নানা এক্টিভিটি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button