বিশেষ ব্যবস্থায় সেন্টমার্টিন গেল পণ্যবাহী ৭ ট্রলার
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্টমার্টিন গেছে পণ্যবাহী এসব ট্রলার।মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিতে বিশেষ ব্যবস্থায় সেন্টমার্টিনে পণ্যবাহী সাতটি ট্রলার পাঠানো হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্টমার্টিন গেছে পণ্যবাহী এসব ট্রলার।টেকনাফের ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব ট্রলারে অন্তত ৫০ জন যাত্রীও সেন্টমার্টিনে গেছেন।’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নাফ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয় কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে।
বুধবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন নৌযান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর প্রেক্ষিতে বুধবার নাফ নদীর সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টির ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে।
তবে বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরও শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
এর প্রেক্ষিতে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুয়ায়ী টেকনাফসহ বাংলাদেশ লাগোয়া পুরো সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রচারিত বিবৃতিতে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশ দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারসহ যে কোন ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে নাফ নদীর জলসীমার শূণ্যরেখার কাছাকাছি নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাফ নদীর বঙ্গোপসাগরের মোহনার আগে বাংলাদেশ অংশ বেশ কয়েকটি ডুবোচর রয়েছে। এতে বড় ধরনের নৌযানগুলোকে নাফ নদীর কিছুটা দূরুত্ব মিয়ানমার অভ্যন্তর দিয়ে চলাচল করতে হয়। সীমান্তে ঝুঁকি এড়াতে উপজেলা প্রশাসন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাফ নদীতে সবধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।’
ইউএনও বলেন, ‘নাফ নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপণ্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্বীপে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে পণ্যবাহী সাতটি ট্রলার কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছে। এসব ট্রলারে অন্তত ৫০ জন যাত্রীও দ্বীপে গেছেন।’
শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, ‘জোয়ারের সময় ছোট ও মাঝারি আকারের ট্রলারগুলোকে নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাংলাদেশের জলসীমার অভ্যন্তর দিয়ে অনুমতি নিয়ে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব ট্রলার কোন অবস্থাতেই শূণ্যরেখার কাছাকাছি অথবা মিয়ানমার জলসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া জোয়ারের সময় যাত্রীবাহী স্পিডবোটগুলো শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর পয়েন্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়ত করতে পারবে।’
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ২৭টি সার্ভিস ট্রলার ও ৪৭টি স্পিডবোটের চলাচল রয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে কোন ধরণের নৌযান চলাচল করেনি। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় পণ্যবাহী সাতটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছে। এসব ট্রলারে কিছু সংখ্যক সাধারণ যাত্রীও ছিলেন।’
এদিকে, মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেকনাফ সীমান্তে নিরাপত্তাসহ টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।