প্রিন্ট এর তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
কুবিতে লোক প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগা
শারাফাত হোসাইন, কুমিল্লা ||
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী সংগঠন ‘লোক প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্বাচন নিয়ে গুরুতর অনিয়ম ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পছন্দের প্রার্থীকে সুবিধা দিতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নির্বাচনের তারিখ হঠাৎ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ও প্রশ্নবিদ্ধ।বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে ২৮ ডিসেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই তারিখ ও সময় পুনরায় নিশ্চিত করা হয়। তবে কোনো পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত কারণ দর্শানো ছাড়াই ২৯ ডিসেম্বর হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করে তা আগামী ৬ জানুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর সকালে কয়েকজন পদপ্রার্থী প্রতি ব্যাচ থেকে দুইজন করে শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংযুক্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। ওই স্মারকলিপিতে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে এমন আশঙ্কা দেখিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হয়।স্মারকলিপি পাওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোছা: শামসুন্নাহার, নির্বাচন কমিশনার সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন এবং নির্বাচন কমিশনার সহকারী অধ্যাপক মো. হাসান শাহরিয়ার বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।তবে লোকপ্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রে নির্বাচনের সময়সূচি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত রয়েছে। গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৩-এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে অনুচ্ছেদ ৬-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের গঠন সংক্রান্ত (গ) ধারায় উল্লেখ আছে, কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ এক বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যা ১৫ ডিসেম্বর শেষ বলে গণ্য হবে। এই সময়ের মধ্যেই বার্ষিক কার্যবিবরণী ও আয়-ব্যয়ের হিসাব বিভাগে জমা দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।গঠনতন্ত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো অনিবার্য কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্ভব না হলে বিষয়টি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একাডেমিক কমিটির কোনো সভা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন এককভাবে তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়, যা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন।এ ছাড়া একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আরাফাত আমিন রাফিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন পদপ্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্য কয়েকজন পদপ্রার্থী নির্বাচন না পেছানোর বিষয়ে আবেদন করলেও সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।নির্বাচনে এক প্রার্থীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচনকে আরও বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী বলেন, “আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন হঠাৎ জানতে পারি কিছু প্রার্থী তাদের পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা বিভাগে গিয়ে বিষয়টি জানাতে চাইলে আমাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। পরে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলে তা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় এবং বলা হয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬ জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে, আমরা অংশগ্রহণ করি বা না করি।”নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আরাফাত আমিন রাফি বলেন, “আসলে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কারণ, একেকজন একেক কথা বলে। মিথ্যা কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।”নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাসান শাহরিয়ার বলেন, “আমি আসলে এই বিষয়ে কথা না বলি। এখানে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আছেন, উনার সাথে কথা বলো।”নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, “আমি গঠনতন্ত্র দেখি নাই, দেখতে বলতে হবে এমন কিছু আছে কিনা। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যাদের আপত্তি রয়েছে তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারে।”প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোছ: শামসুন্নাহারকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। এই বিষয়ে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সোহান তালুকদার বলেন, “যখন আমরা নির্বাচন করেছি। তখন প্রার্থীকে সশরীরে গিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং একটির বেশি মনোনয়ন ফর্ম দেয়া হয়নি।”তিনি আরও বলেন, “আমাদের শেষ ৩ টা নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ বছর ঠিক কি কারণে নির্বাচন পেছানো হয়েছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এটা নির্বাচন কমিশনাররা বলতে পারবে।”এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখিয়েছে, যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংগঠনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন।
কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত