প্রিন্ট এর তারিখ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫
নারীর প্রতি সহিংসতার তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠাতে হবে : শারমীনা
ধ্রুবকন্ঠ ডেক্স ||
মহিলা ও শিশু বিষয়ক
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, কোনো নারীর ওপর সহিংসতা, কোনো শিশুর ওপর নির্যাতন
হলে সেই তথ্যটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ
নারী শিশুর পাশে দাঁড়াতে হবে।সোমবার
দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ
মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের কর্মসূচি তুলে ধরতে এ
সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ১৬ দিনের এ কর্মসূচি শুরু হবে মঙ্গলবার।উপদেষ্টা
বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীরা যে অবদান রেখেছেন তা যেন ইতিহাসে যথাযথভাবে
স্থান পায়। তিনি বলেন, দেশে নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, একটি
দেশ সভ্যতার মধ্যে আছে কিনা, তা নির্ভর করে ওই দেশটিতে নারী শিশুদের নিরাপত্তা
নিশ্চিত রয়েছে কিনা। নারী শিশুর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধার প্রতি ভিত্তি করে
দেশের মান উন্নয়ন নির্ভর হয়।তিনি বলেন, জুলাই
গণঅভ্যুত্থানে ৭০ ভাগ নারী রাস্তায় নেমে এসেছে। সারা বিশ্বকে অভিভূত করেছে। প্রমাণ
করে দিয়েছে, মেয়েরা কোনো অংশে কম নয়। দেশের, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে মেয়েরা—তার
ভাইদের মতোই বলিষ্ঠ। ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা মেয়েদের অবদান দেখেছি, কিন্তু
সেই ইতিহাস ঠিক মতো রচিত হয়নি। চব্বিশে মেয়েদের অবদান যেন ইতিহাসে সুরচিত হয়।
ইতিহাসের পাতায় উজ্বল অক্ষরে লেখা থাকুক—১১ জন নারী শহীদ হয়েছে। এটা ইতিহাস
সৃষ্টিকারী একটা মুহূর্ত।’উপদেষ্টা শারমীন এস
মুরশিদ বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর যেই শিক্ষা নিয়ে আমি এখান থেকে যাচ্ছি তা হচ্ছে
অবকাঠামোগত পরিবর্তন না হলে শক্তিশালী জায়গাগুলো সুদৃঢ় করতে পারব না। একটি
অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকারের মধ্য দিয়ে যেই অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, সেটা এক বছরে
গড়ে তোলার শক্তি কোনো মানুষের হয় না।কোনো নারীর
ওপর সহিংসতা, কোনো শিশুর ওপর নির্যাতন হলে সেই তথ্যটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে
পৌঁছাতে হবে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই তথ্যের সাড়া দিতে হবে। আমি যে ধারণাটা
উত্থাপন করেছি- কুইক রেসপন্স স্ট্র্যাটেজি। মন্ত্রণালয় উপজেলায় গিয়ে থামে; ইউনিয়ন
বা তৃণমূলের কাঠামো নেই।‘সেজন্য
ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশু-কিশোরী ক্লাবগুলোকে পুনরুজ্জবীত করছি। প্রতিটি গ্রামে সহিংসতা
হলে সেটা মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে। চেন অব অ্যাকশনকে সাবলীল করতে হবে। আগামী ১৬ দিনের
কর্মসূচিতে সেটা আমরা শুরু করব।’নারী
নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আয়োজনের একটা বৈশ্বিক সূত্র থাকলেও
বাংলাদেশে এটার তাৎপর্য অপরিসীম। যেই কারণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়, সেই কারণগুলো
আমাদের দেশে বিরাজমান।তিনি বলেন,
রাজনৈতিক শাসকরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে মেয়েদের ওপর জুলুম করে নির্বাচনকে
পক্ষে আনতে হলে একটা কমিউনিটির ওপর সহিংসতা আরোপ করে মেয়েদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে
দেয়। সেই গোষ্ঠী সেই জায়গা থেকে সরে যাবে। রাজনৈতিক বদ উদ্দেশ্যে যারা এই ঘটনাগুলো
ঘটায়, তাদের লাভ হবে। গত ২৫ বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমি বিষয়গুলো
দেখেছি।সমাজে নারী
নির্যাতনের উপাদানগুলো সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ওয়াজে
নারীর সমালোচনা করতে গিয়ে যে ভাষায় তাকে সমালোচনা করা হয়, নারীকে ঝুঁকিতে ফেলে
দেয়। একটি আলোকিত সমাজে নারীর প্রতি যে স্বাভাবিক সম্মানবোধটুকু থাকে, সেটা যখন
ভাঙতে শুরু করে—সেই সমাজ সার্বিকভাবে ভাঙতে থাকে। গত ১৭ বছরে একটি স্বৈরাচারী
পরিবেশে আমরা সেই রূপটুকু দেখতে পেয়েছি। আগামী ১৬ দিনের এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য
হচ্ছে সারাবছর আমরা যেন স্মরণ করিয়ে দিতে পারি যে, এই বিষয়টি মীমাংসিত হয়নি।অনুষ্ঠানে
জানানো হয়, ১৬ দিনের কর্মসূচিতে থাকছে- সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, পদযাত্রা,
আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ প্রচার জোরদার, কুইক
রেসপন্স টিম (০১৭১৩৬৫৯৫৭৩, ০১৭১৩৬৫৯৫৭৪) সম্পর্কিত প্রচার, স্থানীয় পর্যায়ে উঠান
বৈঠক ও কমিউনিটি সচেতনতা কার্যক্রম, আইনি সহায়তা ও মনোসামাজিক কাউন্সেলিং।তাছাড়া
সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা কর্মসূচি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল
সহিংসতা প্রতিরোধে একযোগে শপথ পাঠসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।মহিলা ও
শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
নিজামূল কবীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এমএম/ধ্রুবকন্ঠ
কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত