প্রিন্ট এর তারিখ : ২০ নভেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫
অঙ্কুরিত আলু খেলেই বাড়তে পারে বিপদ, যা বলছে গবেষণাা
ধ্রুবকন্ঠ ডেক্স ||
একটা সময় আলু নিম্নবিত্ত মানুষের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে
বর্তমানে এ খাবারটি সবার কাছেই প্রিয়। সহজলভ্য হওয়ায় এই আলু মধ্যবিত্ত ও
নিম্নবিত্ত মানুষের নিয়মিত খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে আলু
যখন গরম, আর্দ্র পরিবেশ ও আলোর মধ্যে থাকে, তখনই এটি অঙ্কুর হওয়া শুরু করে।এটি আলুর সাধারণ ও প্রাকৃতিক
বৈশিষ্ট্য। তবে অঙ্কুরিত আলুতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঙ্কুরিত আলুতে দুটি
রাসায়নিক যৌগ থাকে ‘সোলানিন ও চ্যাকোনিন’। অল্প পরিমাণে এই যৌগ শরীরে রক্তে
শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সহায়তা করতে পারে।কিন্তু
মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি শরীরের জন্য বিষে পরিণত হয়।বিশেষজ্ঞরা জানান, সামান্য পরিমাণ গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডও শরীরে
প্রবেশ করলে বমি, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর অতিরিক্ত
গ্রহণ করলে মাথা ব্যথা, জ্বর, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ হ্রাসসহ নানা জটিলতা
দেখা দেয়।অঙ্কুরিত
আলু খেলে এ ছাড়া আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।সেগুলো
হচ্ছে— পুষ্টিগুণের পরিবর্তনঅঙ্কুর বের হওয়া
ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে এতে পুষ্টিগুণের ঘাটতি দেখা দেয়। যেমন ভিটামিন সি ও
কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে যাওয়া। এ ছাড়া আলুর আরো কিছু পুষ্টিগুণ কমে, যা
অঙ্কুরের বিকাশের ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এ ছাড়া অঙ্কুরিত আলু কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক
পদার্থও তৈরি করে।যেমন
সোলানিনের পরিমাণ বাড়ায়।এ পদার্থটি অতিরিক্ত
গ্রহণে বমি হতে শুরু করে এবং এটি অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্যও দায়ী। তাই
রান্নার ক্ষেত্রে এই অঙ্কুর কেটে বাদ দিয়ে রান্না করাই ভালো।গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডের মাত্রা বৃদ্ধিআলুতে
গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড থাকে। এটা এক ধরনের টক্সিন, যা আলুকে কীটপতঙ্গের আক্রমণের
হাত থেকে রক্ষা করে। আলুর প্রাকৃতিক ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে কাজ করে। কিন্তু
অঙ্কুরিত আলুতে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড প্রাকৃতিকভাবেই বেশি উৎপন্ন হয়। তাই
অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পেট ব্যথা, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। এ ছাড়া ঝিম
ভাব, মাথা ব্যথাও বাড়তে পারে।অঙ্কুরিত আলু কি একদমই খাওয়া যাবে নাএটা নির্ভর
করছে অঙ্কুরের আকার ও আলুর সবুজ বর্ণের পরিবর্তনের ওপর। বিবর্ণ হলে তা না খাওয়াই
ভালো। এ ছাড়া আলুতে অল্প কুঁড়ি হলে তা কেটে খাওয়া যাবে। এতে তেমন ক্ষতি নেই।অঙ্কুর গজানো প্রতিরোধের উপায়আলু সব
সময় শীতল, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও শুকনা জায়গায় রাখতে হবে। রেফ্রিজারেটরে আলু রাখা
যাবে না। কারণ, বেশি ঠাণ্ডা আলুর স্টার্চকে সুগারে রূপান্তর করে। ফলে আলুর স্বাদ
পরিবর্তিত হয়। পেঁয়াজের সঙ্গে আলু একসঙ্গে কখনোই রাখবেন না। কারণ, পেঁয়াজ থেকে
যে গ্যাস বের হয় তা আলুর কুঁড়ি জন্মাতে সাহায্য করে।আলু সংরক্ষণের টিপস
আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিলেই এই
অঙ্কুর নিয়ে আতঙ্কের কিছু থাকে না। তাই রান্নার আগে আলু ভালোভাবে পরিষ্কার
করে নিতে হবে।
আলুতে জন্মানো অঙ্কুর কেটে বাদ
দেওয়া যেতে পারে। এতে বেশি ঘনত্বের গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডে পূর্ণ অঙ্কুর ফেলে
দিলেই হবে।
আলু পরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে।
নরম হয়ে যাওয়া বা গন্ধযুক্ত আলু ব্যবহার না করে ফেলে দেওয়া ভালো।
আলু পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে একটু
সময় নিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে এই গ্লাইকো–অ্যালকালয়েড তথা
টক্সিনের কার্যকারিতা কমে যায়।
ডায়াবেটিক রোগীদের
জন্য কি এই আলু ভালো?অঙ্কুরিত আলু খাওয়া
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একদমই ঠিক নয়। অঙ্কুরোদ্গমের সময় আলুর স্টার্চ
পরিবর্তিত হয়ে সুগার হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। এটি একজন ডায়াবেটিক
রোগীর জন্য অত্যন্ত খারাপ। এ ছাড়া হজমে ঝামেলা করতেও এর তুলনা নেই।
খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আমাদের বাঁচাতে পারে নানা শারীরিক
সমস্যার হাত থেকে। শুধু খাওয়াটাই মুখ্য না হয়ে বরং কী খাচ্ছি, খাবারটা কতটুকু
উপকারী—এসব জেনে খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত। এতে শরীর সুস্থ থাকবে, রোগজীবাণুও
বাসা কম বাঁধবে।
কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত