.png) 
                 
            প্রিন্ট এর তারিখ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ||
             প্রকাশের তারিখ  : ৩০ অক্টোবর ২০২৫        
        নিরাপত্তা এড়িয়ে মারাত্মক জীবাণু বানাচ্ছে এআই!া
                  
             
           
          
        
                     
           মুহাম্মদ আহসান নাহিয়ান ||           
            জীবনের
মূল নকশা ডিএনএ। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের কার্যকলাপ এই চার অক্ষরের কোডের
মধ্যেই লেখা থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কম্পিউটারে বসেই এই
কোড লেখা যায়। পরে ল্যাবরেটরিতে সেই কোড থেকে তৈরি হয় কৃত্রিম ডিএনএ। যে কাজ
সম্পন্ন হতে আগে হাজার হাজার বছর লাগত, তা এখন কয়েক দিনেই সম্ভব হচ্ছে। এই শক্তি
যেমন নতুন ওষুধ আবিষ্কারে বিপ্লব ঘটাতে পারে, তেমনি ভুল হাতে পড়লে তা হয়ে উঠতে
পারে ভয়ংকর।এখানেই একটি বড় ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। কেউ যদি ইচ্ছে করে এমন কোড
তৈরি করে, যা মারাত্মক বিষ বা বিপজ্জনক জীবাণু তৈরি করতে পারে? এই আশঙ্কার কারণেই
ডিএনএ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এই সফটওয়্যার প্রতিটি
অর্ডার স্ক্যান করে দেখে নেয় যে, সেখানে কোনো পরিচিত বিপজ্জনক সিকোয়েন্স আছে
কিনা। এটি একধরনের নিরাপত্তা ছাঁকনি। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি পরিচিত ঝুঁকির তালিকার
ওপর নির্ভরশীল। তাই অচেনা বা নতুন করে সাজানো কোড ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার
করে সেই বিপজ্জনক কোডকে এমনভাবে বদলে ফেলা সম্ভব, যা সফটওয়্যারের চোখ এড়িয়ে
যায়। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন ‘বায়োলজিক্যাল জিরো-ডে’ দুর্বলতা। তথ্যপ্রযুক্তির
জগতে যেমন আগে থেকে না জানা দুর্বলতাকে ‘জিরো-ডে’ বলা হয়, জীববিজ্ঞানেও এটি এক
নতুন ফাঁক। মানে এটি ঠেকানোর ব্যবস্থা আগে থেকে প্রস্তুত থাকে না। ফলে ক্ষতি হয়ে
যায় খুব দ্রুত ও হঠাৎ।এআই এমনভাবে ডিএনএ সিকোয়েন্স পুনর্লিখন করতে পারে যে, এর ক্ষতিকর
ক্ষমতা ঠিকই থাকে, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাছে তা নিরীহ দেখায়। গবেষণায় এমন
হাজার হাজার পরিবর্তিত সিকোয়েন্স তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো বর্তমান স্ক্রিনিং
সিস্টেম শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক খুঁজতে এআই
ব্যবহার করা হলে তা ভয়াবহ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।এই
হুমকি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়নি। তবে সম্ভাবনাটি এতই গুরুতর যে, প্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ইতিমধ্যেই একটি সফটওয়্যার প্যাচ তৈরি করেছে, যা এই ত্রুটি
বন্ধ করার চেষ্টা করবে। এর পাশাপাশি গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, বহুজাতিক অর্ডার চেইন
পরীক্ষাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি কোড যদি এক দেশে স্ক্রিনিং পার হয়ে যায়,
তবে সেটি অন্য দেশে পাঠিয়ে আরও সহজে ছাড়পত্র পেতে পারে। এর ফলে এক দেশের কঠোর
নিরাপত্তা আরেক দেশের শিথিল নীতির কারণে ব্যর্থ হতে পারে। তাই বৈশ্বিক পর্যায়ে
সমন্বিত নজরদারি ছাড়া সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।তবে প্রতিরক্ষার এই চেষ্টা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, সেটাই মূল
প্রশ্ন। আক্রমণকারী পক্ষও এআই ব্যবহার করে আরও নতুন উপায় বের করবে। ফলে এটি
বিজ্ঞান ও নিরাপত্তার এক অন্তহীন দৌড়ে পরিণত হতে পারে। এই প্রতিযোগিতাকে আরও জটিল
করে তোলে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি। আজ যে সফটওয়্যার শক্তিশালী মনে হচ্ছে, কালই
তা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বশিক্ষিত
স্ক্রিনিং মডেল তৈরি করা জরুরি। এ ধরনের মডেল এআই-উৎপাদিত কোডের গঠনগত বৈশিষ্ট্য
চিনে নিতে পারবে। এক অর্থে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও এআই-সক্ষম হতে হবে, নইলে দৌড়ে
পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।শুধু প্রযুক্তিগত সমাধানই যথেষ্ট নয়। এর জন্য নীতিমালা ও
আন্তর্জাতিক সমন্বয় দরকার। কোন কোড প্রকাশ করা যাবে, কোনটি সীমিত রাখা দরকার, সে
সিদ্ধান্ত একক দেশের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। যেমন সাইবার নিরাপত্তায় বৈশ্বিক
সমাধান প্রয়োজন, তেমনি জৈব নিরাপত্তাতেও দরকার একটি আন্তর্জাতিক কাঠামো। এজন্য
গবেষকরা একটি জীববিজ্ঞান নিরাপত্তা ফোরাম প্রস্তাব করছেন, যেখানে গবেষক,
নীতি-নির্ধারক ও বায়োটেক কোম্পানিগুলো নিয়মিত একত্রিত হবে এবং নতুন হুমকি,
স্ক্রিনিং প্রযুক্তি, নীতিমালা ও প্রতিরোধ নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এতে শুধু
ঝুঁকি মোকাবিলা নয়, ভবিষ্যতের গবেষণাকেও নিরাপদে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।ডিএনএ জীবনের নকশা। কিন্তু এর সুরক্ষাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তা
নির্ধারণ করবে। প্রযুক্তির এই দ্রুতগতির যুগে সেটিকে রক্ষা করা আমাদের জন্য এক
নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কি এই দৌড়ে প্রতিরক্ষাকে এগিয়ে রাখতে
পারব? নাকি একদিন জীবনের নকশাই আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে উঠবে?লেখক: নেটওয়ার্ক কানেক্টর, টিচ ফর অলসূত্র: নেচার, সায়েন্স, বায়োআর্কাইভ ও নেচার বায়োটেকনোলজি
         
        
            
            
            
              কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত