প্রকাশের তারিখ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫
পিরোজপুরে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে সফলতা, ৩১ কোটি টাকার ব্যবসার আশা
একসময় পাহাড়ি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে বাংলাদেশের সমতল ভূমিতেও মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন পিরোজপুরের চাষিরা। কম উৎপাদন খরচ এবং স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় হওয়ায় পিরোজপুর জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর এই সময়ে পিরোজপুরের রসালো মাল্টার ব্যাপক চাহিদা থাকে এবং এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই জেলায় মাল্টা চাষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।লক্ষ্যমাত্রা ৬২০০ মেট্রিক টন, জড়িত সাড়ে ছয় হাজার কৃষককৃষি বিভাগের আশা, এ বছর পিরোজপুরে মাল্টার বাম্পার ফলন হবে এবং প্রায় ৩১ কোটি টাকার মাল্টা ব্যবসা হবে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়:মোট চাষের জমি: চলতি বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে।প্রধান চাষের এলাকা: সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে সদর উপজেলার নাজিরপুর উপজেলায়।উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা: এ বছর ৬ হাজার ২ শত মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।চাষকৃত জাত: এখানে মূলত বারি মাল্টা-১ জাতের চাষ হয়, যা স্থানীয়ভাবে পয়সা মাল্টা নামে পরিচিত।চাষীর সংখ্যা: বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি এ মাল্টা চাষের সঙ্গে জড়িত।পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, পিরোজপুরের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং তারা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।ভালো ফলন, তবে দাম নিয়ে কৃষকের মিশ্র প্রতিক্রিয়াসেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পিরোজপুরের মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে চাষি ও ব্যবসায়ীদের গাছ থেকে মাল্টা আহরণ, বাছাই এবং প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।নাজিরপুরের দক্ষিণ জয়পুর গ্রামের চাষি শুসান্ত কুমার জানান, তিনি শখের বশে মাল্টা চাষ শুরু করলেও এখন তার ৫ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর একটি গাছ থেকে ২ থেকে ৩ মণের বেশি ফলন না পেলেও, এ বছর একই গাছ থেকে ৪ থেকে ৬ মণ মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে।তবে ফলন ভালো হলেও, বাজারে মাল্টার দাম গত বছরের তুলনায় কম থাকায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না বলে তিনি জানান। তবে, বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি দাম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন।মো. রেজাউল হাসান আরও বলেন, পিরোজপুরের মাল্টা আগস্টের শেষের দিকে পরিপক্ব হতে শুরু করে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়।মাল্টা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিরোজপুরে উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানিকৃত মাল্টার চেয়েও বেশি। এখানকার মাটি (এঁটেল, দোআঁশ ও বেলে) ও অনুকূল আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এ কারণে জেলার মাল্টা খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। কৃষি নির্ভর এ জেলায় মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।
কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত