ঢাকাWednesday , 9 July 2025
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলার গর্ব মুরাদনগরের ফুটবল কিংবদন্তি হাজী রমিজউদ্দিন

Link Copied!

কখনও উড়ন্ত সেন্টার ফরোয়ার্ড, কখনও দুর্দান্ত ডিফেন্ডার, আবার কখনও হকি তারকা কিংবা অ্যাথলিট—বহুমাত্রিক প্রতিভার মেলে ধরার নাম হাজী রমিজউদ্দিন আহমেদ। কুমিল্লার মুরাদনগরের বিখ্যাত ভূঁইয়া পরিবারের এই কৃতী সন্তান ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে রাজনীতির ময়দান—সবখানেই ছিলেন সমান উজ্জ্বল।

তাঁর ছোট ভাই তমিজউদ্দিন আহমেদও ছিলেন কলকাতা ফুটবলের লেফট উইংয়ের অন্যতম মুখ। খেলার সময়ের বিশেষ এই আয়োজনে থাকছে দুই সহোদরের অবিস্মরণীয় কীর্তিগাঁথা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কলকাতাকে হারানোর নায়ক

জুন, ১৯২৭। বিহারের রাজধানী পাটনায় স্যার সুলতান আহমেদ শীল্ড আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছিলো ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সাতজন আন্তর্জাতিক ফুটবলার সমৃদ্ধ কলকাতা দল হেরে যায় ১-০ গোলে। সেই ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা এবং ম্যাচসেরা ছিলেন হাজী রমিজ। পুরো টুর্নামেন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৭ গোলের মধ্যে ৬টিই এসেছিলো তাঁর পা থেকে। এরপর থেকেই পশ্চিম বাংলার ক্রীড়ামহলে আলোচনায় আসেন এই তারকা।

স্বর্ণজয়ের অলিম্পিক এবং হকিতেও দাপট

১৯২৭ সালের ঢাকায় অনুষ্ঠিত বেঙ্গল অলিম্পিকে অংশ নিয়ে রমিজ ৯ ডিসিপ্লিনের ৭টিতে স্বর্ণ এবং ২টিতে রৌপ্য পদক জয় করেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হকি দলের নিয়মিত সদস্য। ১৯৩২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি এককভাবে ৪০ পয়েন্ট অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হন।

ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক, কলকাতার মাঠ কাঁপানো এক নাম

১৯২৯ সালে কলকাতার বিখ্যাত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে যোগ দেন রমিজ। টানা ৫ বছর দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। ১৯৩৪ সালে ক্লাবের অধিনায়ক হন এবং দলকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে নিয়ে আসেন। এরপর মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের হয়েও খেলেন। তাঁর আক্রমণভাগে সঙ্গী ছিলেন ফুটবল কিংবদন্তি সামাদ ও নূর মোহাম্মদ।

রাজনীতির মাঠেও সমান জনপ্রিয়, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত

ফুটবলের জনপ্রিয়তা রাজনীতির মাঠে পথ দেখায় রমিজউদ্দিনকে। যুক্তফ্রণ্টের হয়ে তিনি কুমিল্লা থেকে দুবার নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন।

ভাই তমিজউদ্দিনের কীর্তিও কম নয়

একই পরিবারের আরেক ক্রীড়াবিদ তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন কুমিল্লা জেলা ফুটবল দলের এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ দলের নিয়মিত সদস্য। কলকাতার বিভিন্ন বড় ক্লাবে তিনি খেলেছেন লেফট উইং পজিশনে। তাঁরা মিলে গঠন করেন “বিবিডি” নামক বিখ্যাত টিম, যাদের খেলা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন হাজারো কুমিল্লাবাসী।

শেষ কথা: বাংলার ফুটবলে ভূঁইয়া পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য

বলার অপেক্ষা রাখে না, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়া পরিবারের এই দুই সন্তান—রমিজ-তমিজ শুধু কুমিল্লা নয়, সারা বাংলার ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল। অপসৃত সময়ের শ্রদ্ধেয় এই নায়কদের কাছে আজও আমরা ঋণী। তারা বাংলার ফুটবলের গর্ব, মুরাদনগরের অহংকার।