বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণের মৃত্যু, মালিক পলাতক
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৈদ্যুতিক শক সার্কিটে দগ্ধ হয়ে শিপন আহমেদ (২৭) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিপন পৌর শহরের জগতপুর গ্রামের আহমদ আলী বেপারী বাড়ির মৃত মনতাজ আহমেদের ছোট ছেলে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল (বিএনকে হাসপাতাল)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তিনি এক সন্তানের জনক ছিলেন এবং তার স্ত্রীর গর্ভে রয়েছে আরেকটি সন্তান।
গত বুধবার (২০ আগস্ট) উপজেলার উত্তর দরবেশপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও চৌমুহনী বাজারসংলগ্ন আলম ও লিপি দম্পতির বসতঘরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত শিপন চৌমুহনী বাজারে আলম ও লিপি দম্পতির মালিকানাধীন একটি দোকান ভাড়া নিয়ে এসএস (স্টেশনারি) ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি দোকান মালিক আলম ও তার স্ত্রী লিপি তাকে দোকান ছাড়ার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তাদের বাড়ির ছাদে নির্মাণকাজ করতে বাধ্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাদের যেখানে কাজ করানো হচ্ছিল, তার ঠিক এক হাত ওপরে ৪ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইন ছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না করেই শিপনকে সেখানে কাজ করতে বলা হয়।এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি ছাদেই পড়ে যান এবং তার শরীর মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সেখান থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।
চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী কালু মিয়া বলেন,‘ঘটনার আগের দিন শিপন এসে বলেন, ভাই, দোকানের মালিক জোর করতেছে কাজ করতে। না করলে দোকান ছেড়ে দিতে বলে। আমি বলেছি, শিপন, রিস্ক থাকলে করিস না।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আলম এই কাজের জন্য অন্য মিস্ত্রিদের বলেছিল। কেউ রাজি হয়নি। এরপর শিপনকে জোর করে কাজ করানো হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আলম ও লিপি দম্পতি পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা আলমের বাড়িতে গেলে তার ভাইয়ের স্ত্রী বলেন,“শিপনকে বলা হয়েছে, সে কাজ করতে পারবে কিনা। সে বলেছে পারবে।’
নিহতের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন শিপনের মরদেহ নিয়ে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা অভিযোগ করেন,‘এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে গেল।’
শিপনের স্ত্রী মিতু আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে জোর করে কাজ করাতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমার ছোট একটি সন্তান আছে, আর আমি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি এখন কী করব?’
রামগঞ্জ উপজেলার ডিজিএম (জোনাল ম্যানেজার) শাহিন রেজা ফরাজীকে সাংবাদিকরা ফোন করলে তিনি বলেন, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন।”
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল বারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।