বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর থেকে দ্রুত সাংগঠনিক সম্প্রসারণের পথে এগিয়েছে। গত ১ জুন থেকে দেশের ৩৩টি জেলা ও প্রায় ২০০টি উপজেলায় সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে দলটি। তবে, সাংগঠনিক কার্যক্রমে হতাশা, অনিয়মের অভিযোগ, এবং অপরিকল্পিত পদায়নের কারণে গত আড়াই মাসে দলটির অন্তত ২৬ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পদত্যাগের ঢেউ
পদত্যাগকারীদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে কমিটি গঠনে স্বচ্ছতার অভাব, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না মানা, এবং কিছু ক্ষেত্রে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার মধ্যে রয়েছে:
ফরিদপুর: গত ১০ আগস্ট মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগ করেন। তিনি দলের কার্যক্রমকে জুলাই বিপ্লবের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেন।
শিবচর, মাদারীপুর: ৯ আগস্ট শাকিল খানসহ চারজন নেতা পদত্যাগ করেন। তারা অভিযোগ করেন, দায়িত্বশীল পদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম: ৮ আগস্ট এ ইউ মাসুদ পদত্যাগ করেন, কমিটি গঠনে একক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে।
সিলেট: ১২ থেকে ১৪ জুলাই বিশ্বনাথ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে মোট নয়জন নেতা পদত্যাগ করেন। তাদের অভিযোগ, তাদের অজান্তে কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চাঁদপুর, মতলব দক্ষিণ: ২৯ জুন হেলাল উদ্দিন পদত্যাগ করেন, সমন্বয়ককে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করে।
দলের প্রতিক্রিয়া
এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি এসব অভিযোগ তদন্ত করে শোকজ জারি, সতর্কতা প্রদান, এবং কিছু ক্ষেত্রে কমিটি বাতিল বা সদস্য বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে। দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় এখন সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “অভিযোগগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন দল হিসেবে এনসিপির এই অভ্যন্তরীণ সংকট সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার অভাব এবং দ্রুত সম্প্রসারণের চাপের ফল। তবে, জুলাই বিপ্লবের আদর্শের প্রতি জনগণের সমর্থনের কারণে দলটির সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। সাংগঠনিক স্বচ্ছতা ও নেতৃত্বের সমন্বয় নিশ্চিত করতে পারলে এনসিপি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ধ্রুবকন্ঠ/এমআর
সম্পাদক: মোঃ ফয়সাল | প্রকাশক: এইচ এম শাহ পরান | বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): ইমরান হোসেন