ধ্রুবকন্ঠ

নোয়াখালী ভূমি অফিস সহকারী ফ্যাসিস্টের দোসর পলাশ রাতারাতি কোটিপতি



নোয়াখালী ভূমি অফিস সহকারী ফ্যাসিস্টের দোসর পলাশ রাতারাতি কোটিপতি

নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারি মো. ইয়াছিন পলাশ ওরফে ক্যাশিয়ার পলাশ চাকরির ১০ বছরেই বনে যান কোটিপতি। আলিশান বাড়ি, গাড়ির পাশাপাশি অভিজাত নোয়াখালী সুপার মার্কেটে রয়েছে ২টি দোকান। এছাড়াও লাখ টাকা দামি মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: ইয়াছিন পলাশ রাজনৈতিক ছত্র- ছায়ায় ২০১৫ সালে ভূমি অফিসে অফিস সহকারি হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। আর চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। সরেজমিনে তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ৫তলা ভিত বিশিষ্ট ১তলা আলিশান বাড়িটি গত দুই বছর আগে সম্পূর্ণ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর এক আত্মীয় জানান, বাড়িটি করতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভূমি অফিসে চাকরির পরে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।

তিনি আরো জানান, তার পিতা এলাকার ছোট একজন মুদি দোকানদার। বেগমগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২৫ হতে ৩০টি জমাখারিজ আবেদন জমা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা (তহসিলদার) জানান, প্রতি জমাখারিজ নিষ্পত্তি করতে ইয়াছিন পলাশের হাতে ৪ হাজার একশত টাকা হারে ঘুষ দিতে হয়। ভিপি সম্পত্তি অথবা জমাখারিজের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতিতে গুণতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চৌমুহনী পৌর তহসিল অফিসের নামজারি সহকারি হওয়ার সুযোগে পৌরসভার সরকারি সম্পত্তির ১সনা লীজকৃত সম্পত্তি নবায়ন করতে অথবা নতুন আবেদনে নবায়ন হলে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করা লাগে। সরকারি সম্পত্তি লীজ নিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি উল্লেখ করে এবং এর প্রতিকার চেয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।


সূত্র আরো জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বে ৫জন নামজারি সহকারি থাকলেও সকলে সবার কালেকশনকৃত ঘুষের টাকা ইয়াছিন পলাশের হাতে তুলে দেওয়ার অঘোষিত নিয়ম চালু রয়েছে ।

সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, নামজারির থেকে ১হাজর একশত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বাকি ৩ হাজার টাকা সন্ধ্যার পর পুরো অফিসে বিলি বন্টন হয়। এজন্য অফিসের সবাই এবং সকল তহসিলদার তাকে এ্যাসিল্যান্ডের ক্যাশিয়ার পলাশ নামেই চিনে। তাঁকে ম্যানেজ না করে সরাসরি এ্যাসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করার সাহস রাখে না বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তারা (তহসিলদার)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে থাকা অবস্হায় সুযোগ সন্ধানী ইয়াছিন পলাশ স্হানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে চাকরিতে ঢুকে পড়েন।২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে বেগমগঞ্জ উপজেলার ভূমি অফিসে যোগ দিয়ে দীর্ঘদিন একই উপজেলায় একই পদে কিভাবে চাকরি করছেন এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী জেলা তহসিলদার সমিতির এক নেতা জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার আস্থাভজন হওয়ায় তাকে সেখান থেকে বদলি হতে হয়নি।


অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইয়াছিন পলাশ বলেন, অফিসিয়ালি আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না, যা বলার আমার স্যারের সাথে বলেন।

উল্লেখ্য ৫ই আগস্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর জেলার সকল জায়গায় বদলি হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন এই দুর্নীতির বরপুত্র ক্যাশিয়ার পলাশ।

ধ্রুবকন্ঠ/এসপি

বিষয় : রাতারাতি কোটিপতি

আপনার মতামত লিখুন

ধ্রুবকন্ঠ

সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫


নোয়াখালী ভূমি অফিস সহকারী ফ্যাসিস্টের দোসর পলাশ রাতারাতি কোটিপতি

প্রকাশের তারিখ : ০২ নভেম্বর ২০২৫

featured Image

নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারি মো. ইয়াছিন পলাশ ওরফে ক্যাশিয়ার পলাশ চাকরির ১০ বছরেই বনে যান কোটিপতি। আলিশান বাড়ি, গাড়ির পাশাপাশি অভিজাত নোয়াখালী সুপার মার্কেটে রয়েছে ২টি দোকান। এছাড়াও লাখ টাকা দামি মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: ইয়াছিন পলাশ রাজনৈতিক ছত্র- ছায়ায় ২০১৫ সালে ভূমি অফিসে অফিস সহকারি হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। আর চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। সরেজমিনে তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ৫তলা ভিত বিশিষ্ট ১তলা আলিশান বাড়িটি গত দুই বছর আগে সম্পূর্ণ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর এক আত্মীয় জানান, বাড়িটি করতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভূমি অফিসে চাকরির পরে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।

তিনি আরো জানান, তার পিতা এলাকার ছোট একজন মুদি দোকানদার। বেগমগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২৫ হতে ৩০টি জমাখারিজ আবেদন জমা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা (তহসিলদার) জানান, প্রতি জমাখারিজ নিষ্পত্তি করতে ইয়াছিন পলাশের হাতে ৪ হাজার একশত টাকা হারে ঘুষ দিতে হয়। ভিপি সম্পত্তি অথবা জমাখারিজের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতিতে গুণতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চৌমুহনী পৌর তহসিল অফিসের নামজারি সহকারি হওয়ার সুযোগে পৌরসভার সরকারি সম্পত্তির ১সনা লীজকৃত সম্পত্তি নবায়ন করতে অথবা নতুন আবেদনে নবায়ন হলে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করা লাগে। সরকারি সম্পত্তি লীজ নিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি উল্লেখ করে এবং এর প্রতিকার চেয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।


সূত্র আরো জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বে ৫জন নামজারি সহকারি থাকলেও সকলে সবার কালেকশনকৃত ঘুষের টাকা ইয়াছিন পলাশের হাতে তুলে দেওয়ার অঘোষিত নিয়ম চালু রয়েছে ।

সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, নামজারির থেকে ১হাজর একশত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বাকি ৩ হাজার টাকা সন্ধ্যার পর পুরো অফিসে বিলি বন্টন হয়। এজন্য অফিসের সবাই এবং সকল তহসিলদার তাকে এ্যাসিল্যান্ডের ক্যাশিয়ার পলাশ নামেই চিনে। তাঁকে ম্যানেজ না করে সরাসরি এ্যাসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করার সাহস রাখে না বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তারা (তহসিলদার)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে থাকা অবস্হায় সুযোগ সন্ধানী ইয়াছিন পলাশ স্হানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে চাকরিতে ঢুকে পড়েন।২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে বেগমগঞ্জ উপজেলার ভূমি অফিসে যোগ দিয়ে দীর্ঘদিন একই উপজেলায় একই পদে কিভাবে চাকরি করছেন এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী জেলা তহসিলদার সমিতির এক নেতা জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার আস্থাভজন হওয়ায় তাকে সেখান থেকে বদলি হতে হয়নি।


অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইয়াছিন পলাশ বলেন, অফিসিয়ালি আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না, যা বলার আমার স্যারের সাথে বলেন।

উল্লেখ্য ৫ই আগস্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর জেলার সকল জায়গায় বদলি হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন এই দুর্নীতির বরপুত্র ক্যাশিয়ার পলাশ।

ধ্রুবকন্ঠ/এসপি


ধ্রুবকন্ঠ

“তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম”

কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত